Vitamin Deficiency: ভিটামিনের ঘাটতির কারণে চুলকানি, ত্বকে ফাটল এমনকি সংক্রমণের মতো সমস্যাও হতে পারে। সময় থাকতে জেনে সতর্কতা নিন।
ত্বকে ঘন ঘন চুলকানি ও শুষ্কতা অনেকের জন্যই অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি বা শুষ্ক ত্বক থাকার অন্যতম কারণ হতে পারে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, বিশেষ করে কিছু ভিটামিনের ঘাটতি হলে ত্বকে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এমন ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন রয়েছে, যেগুলির ঘাটতির ফলে ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি বাড়তে পারে। তাই এই লক্ষণগুলিকে অবহেলা না করে পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি ত্বককে বেশ কয়েকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যার মধ্যে শুষ্ক ও ফ্ল্যাকি ত্বক অন্যতম। তাই ত্বক, চুল, নখকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত খাদ্যের মাধ্যমে বা প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টের সাহায্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। ডাঃ রিঙ্কি কাপুর, যিনি একজন কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিস্ট, কসমেটিক ডার্মাটোলজিস্ট এবং ডার্মাটো-সার্জন, দ্য এস্থেটিক ক্লিনিক থেকে জানাচ্ছেন, কোন ভিটামিনের ঘাটতি চুলকানি ও ত্বকের সমস্যার কারণ হয় এবং আমাদের খাদ্যতালিকায় ঠিক কোন ভিটামিনগুলির অন্তর্ভুক্তি দরকার।
কোন ভিটামিনের অভাবে চুলকানি হয় জানুন
Vitamin Deficiency: ভিটামিন এ
ভিটামিন এ ত্বকের কোষ মেরামত ও নতুন কোষ তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে ত্বকে শুষ্কতা, মৃত কোষ জমা এবং একজিমা বা প্রদাহের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরণে নিয়মিত সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের সবজি যেমন গাজর, পালং শাক, মিষ্টি আলু, কমলা লেবু, আম, পেঁপে ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়া খাসির মাংস, মুরগি, মাছ, ডিম, গম এবং সয়াবিন থেকেও ভিটামিন এ পাওয়া যায়। এই খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় রাখলে ত্বক থাকবে সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল।
Vitamin Deficiency: ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি, যাকে আমরা “রোদ বা সূর্যালোক ভিটামিন” বলেও চিনি। হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বকের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ত্বকের এপিডার্মিসে ভিটামিন ডি থাকে, আর ত্বক শুষ্ক হলে তা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির একটি সাধারণ লক্ষণ। এই ভিটামিন ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক বাধা তৈরি করে, যা ত্বককে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ব্রণ, বলিরেখা বা সূক্ষ্ম রেখা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে, যা ত্বককে আরও উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে। আপনি সূর্যের আলো (নিরাপদ সময়ে) এবং লাল মাংস, ডিমের কুসুম, চর্বিযুক্ত মাছ, প্রাতঃরাশের সিরিয়াল, কমলা, সয়া দুধ, মাশরুম, ওটমিল ইত্যাদি খাবার থেকে ভিটামিন ডি পেতে পারেন।
Vitamin Deficiency: ভিটামিন ই
ভিটামিন ই ত্বককে হাইড্রেটেড এবং ময়শ্চারাইজড রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ত্বকের লিপিড স্তরকে বজায় রাখার পাশাপাশি প্রদাহ এবং বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণগুলোও কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই-এর অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফাটল ধরতে পারে, যা আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে। ত্বকের ফাটল সারিয়ে তুলতে এবং ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে ভিটামিন ই অপরিহার্য। এই ভিটামিন পেতে আপনি সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম, চিনাবাদাম, কুমড়োর বীজ, গোলমরিচ, কুসুম এবং সয়াবিন তেল ইত্যাদি খাবার আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
Vitamin Deficiency: ভিটামিন সি
ভিটামিন সি শুধুমাত্র ত্বক রক্ষাকারী নয়, এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে এবং কোলাজেন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি-এর অভাবে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়, ফলে ত্বক শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। তাই ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইট্রাস ফল যেমন কমলা, লেবু, গোলমরিচ, স্ট্রবেরি, ব্রকোলি, ক্যান্টালপ ইত্যাদি খাবার থেকে আপনি সহজেই ভিটামিন সি পেতে পারেন, যা ত্বককে সজীব এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।
জিঙ্ক
সামান্য জিঙ্কের অভাবও কিন্তু বেশ কিছু ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন সোরিয়াসিস, শুষ্ক স্ক্যাল্প, এটোপিক ডার্মাটাইটিস এমনকি একজিমা। তাই ত্বককে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ঝিনুক, লাল মাংস, মুরগি, লবস্টার, মটরশুটি, বাদাম ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ত্বক ঠিকঠাক রাখতে হলে আপনার খাদ্য তালিকায় এসব পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। ত্বকের যত্নের পাশাপাশি আমাদের শরীরের ভেতর থেকে পুষ্টি দেওয়াও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ও খনিজ যুক্ত খাবার রাখা উচিত, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। তবে শুধু খাদ্যই নয়, প্রয়োজনে বিশেষ কোনো পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যেন সঠিক সমাধান পাওয়া যায়।
(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)