সিভিক ভলেন্টিয়ারঃ আর জি কর কান্ডে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের নাম আগেই মূল অভিযুক্তদের তালিকায় উঠে এসেছিল। এবার সুপ্রিম কোর্ট তাদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার কারনে তাদের চাকরিতে টানাপোড়ন সৃষ্টি করেছে। মেডিকেল কলেজের ঘটনার ফলে গোটা রাজ্যে উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জুনিয়র ডাক্তাররা লাগাতার কর্মবিরতি ও ধর্মঘট পালন করছেন। এবং মুখ্যমন্ত্রী বারবার চেষ্টা করেও তাদের কাজে ফেরাতে পারেননি। ডাক্তাররা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। যতদিন না তারা সঠিক বিচার পাবেন, ততদিন তারা ছাড়বেন না। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন তারা। অন্যদিকে দোষীদের রাতের ঘুম উড়েছে।
চাকরি হারানোর আশঙ্কায় লাখ লাখ সিভিক ভলেন্টিয়ার
সিভিক ভলেন্টিয়ারদের নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কী বলল?
শুনানির সময় জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়োগের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি আর জি কর মামলার মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে উল্লেখ করেন। হাসপাতালে কেন এমন কম প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন। ইন্দিরা জয়সিংহের মতে, চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা সঠিক প্রশিক্ষণ না পাওয়ার কারণে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের নিরাপদ বোধ করছেন না।
সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারকে তীব্র সমালোচনা করেছে। প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে মাত্র সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের মতো চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে? তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দ্বারা হাসপাতালের নিরাপত্তা আদৌ নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা হাসপাতালের এত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতে পারে না। রাজ্য সরকারকে এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।” এর মাধ্যমে তিনি রাজ্যের কর্তৃপক্ষের প্রতি পরিষ্কার বার্তা পাঠিয়েছেন যে, নিরাপত্তা এবং প্রশিক্ষণ সম্পর্কে আরও মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়েও সুপ্রিম কোর্টের উদ্বেগ
শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ করে মহিলা ডাক্তারদের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রধান বিচারপতির মতে, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দ্বারা নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে কীভাবে মহিলা চিকিৎসকরা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করবেন? তিনি বলেন, “চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা যদি অপরাধে জড়িত থাকেন, তাহলে হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপদ মনে করবেন কীভাবে? তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন যে, মহিলা ডাক্তারদের নিরাপত্তা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গুরুতর বিষয়।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে রাজ্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আদালতের আগের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?” এর জবাবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে, প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ ছিল, কেন এখনও পর্যন্ত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, বিশেষ করে যখন সুরক্ষা এমন গুরুত্বপূর্ণ।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রশিক্ষিত পুলিশ নিয়োগের দাবি
জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ আরও বলেছেন, হাসপাতালগুলোতে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের বদলে প্রশিক্ষিত পুলিশকর্মীদের নিয়োগ করা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, সিভিক ভলেন্টিয়ারদের মাত্র কিছু ট্রেনিং দিয়ে দায়িত্ব পালনে পাঠানো হচ্ছে, যা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন অনিরাপদ নিরাপত্তার ব্যবস্থা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার মতে, চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে যোগ্য ও প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কর্মীদের প্রয়োজন।