Muhammad ali jinnah: রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে, এবং এই অনুষ্ঠানে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য চেয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে তারা জনগণের মতামত আহ্বান করেছে।ফেসুবক পোস্টে দলটি লিখেছে, বাংলাদেশে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন, তাও জাতীয় প্রেসক্লাবে! আপনার মন্তব্য কি?
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে আলোচনা সভার পাশাপাশি উর্দু গান ও কবিতা পরিবেশন করা হয়।
নওয়াব সলিমুল্লাহ একাডেমি আয়োজিত সভায় অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাঁর প্রবন্ধে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গাল।
নওয়াব সলিমুল্লাহ একাডেমির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আব্দুল জাব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মো. সামসুদ্দিন, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, মো. শাখাওয়াত, সাইদুর রহমান, আবু হানিফ, নজরুল ইসলামসহ অন্যান্য ব্যক্তিত্ব। অনুষ্ঠানের সময় উর্দু ভাষায় দেওয়া এক বক্তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা অনেকেই শেয়ার করেছেন। জানা গেছে ওই ব্যক্তির নাম এসকে আজিম। তিনি ঢাকার একটি বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা।
Muhammad ali jinnah ১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওতে ওই ব্যক্তি উর্দু ভাষায় যা বলেছেন, তার বাংলা অনুবাদ প্রায় এরকম:
“১৫-১৬ বছর পর আমরা এখানে উর্দু ভাষায় কথা বলছি এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারছি। এজন্য অনুষ্ঠানের আয়োজকদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ। মিরপুর-মোহাম্মদপুর আমাদের বাপ-দাদাদের বসবাসের এলাকা ছিল, যারা পাকিস্তানের পক্ষে জীবন দিয়েছেন। ভারত থেকে বিভক্ত হয়ে এই দেশ পাকিস্তান হয়েছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেব না থাকলে এশিয়া মহাদেশে মুসলমানদের জন্য কোনো দেশ থাকত না। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেবের জন্য আমরা পাকিস্তান পেয়েছি, যেখানে আমরা মুসলমানরা সম্মানের সাথে ধর্ম পালন করতে পারি। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের এই দেশকে দুই ভাগ করে দিয়েছে। পঞ্চাশ-ছাপান্ন বছর ধরে আমাদের বাপ-দাদারা এই পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে গেছেন। এজন্য আজ আমাদের এখানে পাকিস্তানের সবাইকে দেখে এবং এ অনুষ্ঠানে এসে খুব খুশি লাগছে। ইনশাআল্লাহ, আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মো. সামসুদ্দিন বলেন, “৫ আগস্ট আমাদের বিজয় দিবস, এটিই আমাদের স্বাধীনতা দিবস।
এ সময় তিনি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে স্মরণ করে বলেন, “১৯৪৭ সালে যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে না থাকতো, তাহলে আজ কাশ্মীরের মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। ভারতীয় বাহিনী হয়তো ঘাড়ে অস্ত্র ধরেই রাখতে পারত। জিন্নাহ পাকিস্তানের সঙ্গ নিয়েছে বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আল্লামা ইকবাল হল বা জিন্নাহ এভিনিউর নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন কী? দিল্লি চেয়েছে, তাই পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এসব পরিবর্তন চাই না। তাই আমাদের উচিত বাংলাদেশকে চীন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
আরেক বক্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “যেকোনোভাবে হোক, আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমাদের পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরি। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ না থাকলে পাকিস্তান সৃষ্টি হতো না, এবং পাকিস্তান না থাকলে বাংলাদেশও জন্ম নিত না। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ আমাদের জাতির পিতা, যদিও আমরা তা সবসময় স্বীকার করি না। তবে আমাদের ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে হবে। আমি আশা করি, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী প্রতিবছর এখানে (বাংলাদেশে) যথাযথভাবে পালিত হবে।
মো. শাখাওয়াত বলেন, “ভারতীয় উপমহাদেশে ১৭৫৭ সালের পর যে রাজনৈতিক অদক্ষতা বা হিংসা ছিল, তার অবসান ঘটান মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। মানুষ হিসেবে জিন্নাহ ছিল অত্যন্ত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। একজন মুসলমানের যে চরিত্র থাকা প্রয়োজন, তা জিন্নাহর মধ্যে ছিল। যদি জিন্নাহ ১৯৪৭ সালে এই বাংলাদেশের দায়িত্ব না নিতেন, তবে এই জাতির অবস্থা পশ্চিম বাংলার মতো হয়ে যেত। ভারতীয় রাজ্য হয়ে থাকতো। দায়িত্ব গ্রহণের কারণে তিনি বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে’। আমাদের এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি মজবুত করতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গাল বলেন, মুসলিম লীগে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্ব ছিল অসাধারণ। এটি ছিল সমগ্র ভারতের মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলনের সূচনা। যদিও তার স্বাস্থ্য ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছিল, তবুও তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রীয় ব্যক্তি। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল।
কামরান ধাঙ্গাল আরও বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হন। নতুন জাতির জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুস্পষ্ট। তিনি একটি প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলেছিলেন এবং স্বাধীনতা ও সহনশীলতার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। তিনি শুধু পাকিস্তানেই নয়, বরং সারা বিশ্বে সমাদৃত।