ঘামের দুর্গন্ধঃ এই তীব্র গরমে ঘাম হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষের ভিড়, পলিউশন, আবহাওয়ার আর্দ্রতা—এসব মিলিয়ে মার্কেটগুলোর এয়ার কন্ডিশনারও যেন এই তাপমাত্রার সাথে তাল মেলাতে পারছে না। এর ফলে, ঘামের দুর্গন্ধ আমাদের সবার মাঝে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। শুধু মার্কেট নয়, অফিস, আদালত কিংবা বন্ধুদের আড্ডাতেও সব জায়গায় আপনার উপস্থিতি কারও কাম্য থাকে না।
অনেক সময় আমরা নিজের গায়ের ঘামের দুর্গন্ধ বুঝতে পারি না, কিন্তু যারা বুঝতে পারেন তাদের জন্যও কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনি যেমন নিজেকে সুস্থ ও তাজা রাখতে পারবেন, তেমনি সবার কাছে বিরক্তির কারণও হবেন না।
ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি ও ত্বক উজ্জ্বল করার সহজ উপায়
ফিটকিরিতে কী
ফিটকিরির সঙ্গে আমাদের সকলেরই পরিচয় আছে। ছোটবেলায় যখন বাবা, জেঠু বা কাকারা দাড়ি কাটতেন, তখন তাদের হাতে প্রথম ফিটকিরি দেখেছিলাম। পাড়ার সেলুনেও ফিটকিরির দেখা পাওয়া যেত। আসলে, এটি একটি অ্যান্টিসেপটিক বা অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ফিটকিরিতে রয়েছে অনেক গুণ। এতে পটাশিয়াম অ্যালুমিনাম সালফেট থাকে, যা ত্বকের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ফেসিয়াল করার সময় অনেকেই এটি মুখে মাখেন, কারণ এটি ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে এবং আপনার ত্বক কিন্তু সহজে ঝুলে যাবে না।
ফিটকিরিতে কী কী গুণ রয়েছে (benefits of using Fitkiri)
ফিটকিরিতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান, যা মুখে মাখলে ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখে। এর মধ্যে পটাশিয়ামও থাকে, যা ইংরেজিতে “আলুম” নামে পরিচিত। মাত্র ৫ টাকার এই ফিটকিরি দিয়েই আপনি আপনার ত্বক উজ্জ্বল রাখতে পারেন এবং মুখের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করতে পারেন। কীভাবে করবেন, তা জানতে পুরোতা পড়ুন।
ফিটকিরিতে ঘামের গন্ধ দূর হবে?
হ্যাঁ, ফিটকিরি ঘামের গন্ধ দূর করতে সাহায্য করতে পারে। এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক, যা ত্বকে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে, ফলে ঘামের গন্ধও কমতে পারে। যদি কারোর শরীর থেকে খুব বেশি দুর্গন্ধ বের হয়, যেমন বর্ষাকালে বা গরমকালে অনেকেই বগল থেকে ভীষণ দুর্গন্ধের সমস্যায় পড়েন, তাহলে পাশে দাঁড়ানো সত্যিই কঠিন হতে পারে। অনেক সময় স্নান করার পরেও এই দুর্গন্ধ দূর করা যায় না। এই পরিস্থিতিতে, বগলে ফিটকিরি ঘষা এক সহজ সমাধান হতে পারে। ফিটকিরি ব্যবহার করে আপনার বগল থেকে ঘামের গন্ধ দূর করা সম্ভব।
ফিটকিরিতে মুখের বলিরেখা দূর হবে?
ফিটকিরি মুখের বলিরেখা সরাসরি দূর করতে পারে না, তবে এটি ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে। মুখের বলিরেখা কমাতে আপনি ফিটকিরি দিয়ে মুখে ম্যাসেজ করতে পারেন। এতে আপনার মুখের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং মুখের ছিদ্র বা কালো দাগও সহজেই কমতে পারে। ফিটকিরির এই বিশেষ গুণ ত্বককে টানটান ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
ক্ষত সারতে ফিটকিরি ব্যাবহার
ক্ষত সারাতে ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। ফিটকিরি ক্ষতের জায়গায় প্রয়োগ করলে ব্যাকটেরিয়া কমে যায়। যদি আপনার কোথাও কেটে যায় বা ছোটখাটো ক্ষত হয়, ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন। এটি সহজেই সংক্রমণের জ্বালা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে এবং ক্ষত দ্রুত সারাতে সহায়তা করে।
ফিটকিরি ব্যবহারের পদ্ধতি:
- ফিটকিরি পাউডার বা স্টিক আকারে ব্যবহার করুন।
- পরিষ্কার কাপড় বা তুলা দিয়ে ক্ষতের জায়গায় সোজা মুছে দিন।
- ফিটকিরি লাগানোর পর কিছু সময় অপেক্ষা করুন, তারপর শুকনো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
এটি শুধুমাত্র ছোটখাটো ক্ষত বা কাটাছেড়া সারাতে উপকারী, বড় ক্ষত বা গম্ভীর সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মুখের ঘা বা ফোলাভাব দূর হবে
হ্যাঁ, ফিটকিরি মুখের ঘা বা ফোলাভাব দূর করতে সাহায্য করতে পারে। আপনি কি জানেন, ফিটকিরির জল মুখে দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের ঘা এবং ফোলাভাব দূর হতে পারে? ত্বকে চুলকানি বা ফোলাভাব থাকলেও এটি কার্যকরী হতে পারে। ফিটকিরির এর অ্যান্টিসেপটিক গুণাগুণ মুখের ঘা বা ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
ফিটকিরিতে ত্বক উজ্জ্বল হবে?
হ্যাঁ, ফিটকিরি ব্যাবহারে ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিসেপটিক ও টানটান করার গুণাগুণ ত্বককে মসৃণ এবং টানটান রাখতে সাহায্য করে। ফিটকিরি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং পোরস সংকীর্ণ করতে সহায়ক হতে পারে, ফলে ত্বক আরও উজ্জ্বল এবং স্বচ্ছ দেখায়।
ফিটকিরিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকে, যা ত্বকের ফোলা ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের যেকোনও জায়গায় ফুলে গেলে আপনি ফিটকিরি ঘষতে পারেন এবং এতে খুব সহজেই আরাম পাবেন। এটি ত্বককে শান্ত করতে সহায়তা করে এবং ত্বক উজ্জ্বলও করতে পারে। তবে, যদি আপনার অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে ফিটকিরি ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো।