IND vs BAN 1st Test: ভারতের লিড ছিল ২২৭ রানের বিশাল ব্যবধান। তারপরও চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ফলো-অন করানোর সুযোগ হাতছাড়া করল টিম ইন্ডিয়া! প্রথম ইনিংসে ভারত ৩৭৬ রানে অলআউট হওয়ার পর জসপ্রিত বুমরাহের নেতৃত্বে দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশকে মাত্র ১৪৯ রানে গুটিয়ে দেয় ভারতীয় বোলাররা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে ফলো-অন করানোটা স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত মনে হলেও, ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা সেই পথে হাঁটেননি। শুক্রবার এই সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক, কিন্তু এর পেছনে ছিল রোহিতের এক বিশেষ কৌশল।
প্রথম টেস্টে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়াছিল বাংলাদেশ, তখনই তাদের পরিকল্পনা স্পষ্ট ছিল—শুরুতেই ভারতকে চাপে রাখা। আর প্রথম দিনেই সেটা যেন সফলও হলো। ১৪৪ রানে ভারত হারিয়ে বসল প্রথম ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। যশস্বী জয়সওয়াল ছাড়া বাকি কেউই হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তবে এরপরই শুরু হয় রিভার্স! অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সপ্তম উইকেট জুটিতে উঠে যায় ১৯৯ রান। জাদেজা করলেন ৮৬ রান, আর অশ্বিন তাঁর ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি করে ১১৩ রান তুললেন। এই জুটির অবিশ্বাস্য ইনিংসেই প্রথম ইনিংসে ভারত ৩৭৬ রানে পৌঁছে যায়।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ভারত-বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট, চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজের প্রথম দিনের শুরুতেই টিম ইন্ডিয়া চাপে পড়ে গিয়েছিল, মাত্র কয়েক রানের ব্যবধানে তিনটে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারায় তারা। তবে এরপরই দৃশ্যপট পাল্টায়। অশ্বিন-জাদেজার দাপটে দ্বিতীয় দিনে ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় শক্তিশালী অবস্থানে। বাংলাদেশও প্রথম ইনিংসে ভালো লড়াইয়ের আশা দেখালেও, ভারতীয় বোলাররা নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে চাপে রেখে সেই সুযোগ দেয়নি। ফলে, প্রথম ইনিংসে বড় লিড নিয়ে বাংলাদেশকে ফলো-অন করানোর সুযোগ তৈরি হয় ভারতের সামনে।
টেস্ট ম্যাচে নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম ইনিংসে কোনও দল প্রতিপক্ষের চেয়ে ২০০ রানের কমে পিছিয়ে থাকলে তাদের ফলো-অন করানোর সুযোগ থাকে। অর্থাৎ, যদি ভারত বাংলাদেশকে ফলো-অন করাত, তাহলে বাংলাদেশকে আবারও ব্যাট করতে নামতে হতো। তবে, শুক্রবার এই সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক রোহিত শর্মা সেই সুযোগ নেননি। তাঁর এই সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে।
এর অন্যতম কারণ হল, জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতকে টানা টেস্ট খেলতে হবে, যা খেলোয়াড়দের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ২০২৫ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে টানা তৃতীয়বার জায়গা করে নিতে হলে সামনের ৯টি টেস্টেই জিততে হবে ভারতকে। তাই, দলের খেলোয়াড়দের, বিশেষ করে বোলারদের ফিট রাখা ভীষণ জরুরি। কিন্তু প্রথম টেস্টে যদি বাংলাদেশকে ফলো-অন করানো হতো, তাহলে বাংলাদেশকে আবার ব্যাট করতে হতো এবং ভারতীয় বোলাররা বিশ্রামের সুযোগ পেতেন না। এখন দেশে বৃষ্টির বিরতি দিয়ে গরম আর আর্দ্র আবহাওয়া ফিরে এসেছে, চেন্নাইয়ের আবহাওয়াও একই রকম। তাই অতিরিক্ত পরিশ্রমের ঝুঁকি না নিয়ে, রোহিত শর্মা তাঁর বোলারদের বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ভারত আরও বড় রানের ইনিংস গড়তে চেয়েছে, যাতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে চেষ্টা করেও সেই বিশাল রান পেরোতে না পারে। রোহিতদের লক্ষ্য ছিল সেখানেই। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চেন্নাইয়ের পিচ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পিচ ভাঙতে শুরু করবে এবং স্পিনারদের জন্য সহায়ক হয়ে উঠবে। তাই ভারত চায়, এই অবস্থায় বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে তাদের চাপে রাখতে, আর ভারতীয় স্পিনারদের সেই সুবিধা কাজে লাগাতে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কারণেই অধিনায়ক রোহিত শর্মা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে ফলো-অন করাননি।