Rekha: সত্তরের রেখা ২০ মিনিট একটানা নাচে বার্ধক্যকে হার মানালেন। ভিনেতাদের জীবন নিয়মে বাঁধা। একটু এ দিক-ও দিক করার জো নেই। বার্ধক্যেও রেখার এই অবাক করা ফিটনেস অনেকের কাছেই প্রত্যাশিত। তা হলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কি বার্ধক্য মানেই অসুস্থতা?
মঞ্চে এসে মাত্র ২০ মিনিটের নাচে সবাইকে চমকে দিলেন রেখা। তাঁর প্রাণশক্তি আর নাচের ছন্দ যেন সময়ের উর্দ্ধে! ৭০ বছর বয়সের দিকে এগোচ্ছেন, তবুও রেখার এনার্জি নিয়ে বলিউডে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ‘পিয়া তোসে ন্যায়না লাগে রে’ আর ‘পরদেশিয়া’ গানের তালে নেচে সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন, বয়স তো কেবলমাত্র একটা সংখ্যা। সত্তরেও চাইলে এভাবে নাচে মাতিয়ে তোলা যায়!
প্রকৃতির নিয়মে বয়স বাড়ে, শরীরে নানা পরিবর্তন আসে, কিন্তু রেখা যেন প্রমাণ করলেন, চাইলে বয়সের উপরও জয় পাওয়া সম্ভব। তাঁর এই নাচের ভিডিও দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তবে এমন ফিটনেস ধরে রাখা সহজ নয়। নেপথ্যে রয়েছে অসীম পরিশ্রম আর শৃঙ্খলা। সিনে জগতে নাম করা অভিনেত্রী হলেও, রেখা তাঁর শরীর আর সৌন্দর্যকে বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতো এমন ফিটনেস ধরে রাখা যেন অনেকের কাছে একধরনের সাধনা।
তা হলে কি বার্ধক্য মানেই অসুস্থতা? একেবারেই না, অন্তত ৮৩ বছর বয়সী নৃত্যশিল্পী পূর্ণিমা ঘোষ তা মানতে নারাজ। এখনও সপ্তাহে তিন দিন নাচ শেখান তিনি, এবং তাঁর নাচের ভঙ্গি বা শরীরী ভাষায় কোনও ত্রুটি নেই। ৮০ পেরিয়েও তাঁর ফিটনেস দেখলে যে কেউ অবাক হবে। কীভাবে সম্ভব হল এমন ফিটনেস ধরে রাখা?
পূর্ণিমা বললেন, “চাইলে সবই সম্ভব। আমার অনেক ছাত্রীর বয়স ৫০-এর উপরে। ওঁরা এই বয়সে এসে নতুন করে নাচ শিখতে শুরু করেছেন। ওঁদের দেখে আমি নিজেই অনুপ্রাণিত হই।
এই বয়সেও ভরতনাট্যমের মতো শারীরিক কসরতসাধ্য নাচ করতে পারেন তিনি, এবং নিশ্চয়ই কঠোর নিয়ম মেনে জীবনযাপন করেন? পূর্ণিমার উত্তর, “কঠোর নিয়ম কিনা জানি না, তবে আমি সব কিছু সময়ে করি—সময়ে খাই, সময়ে ঘুমোই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিই। নিজের যত্ন না করলে বয়সের কাছে হার মানতে হয়। তার চেয়ে নিয়ম মেনে চলা অনেক ভাল।
বয়স বাড়ার পর কি ফিট থাকার প্রস্তুতি শুরু করলেই উপকার পাওয়া যাবে, নাকি আগেই শুরু করতে হবে? পুষ্টিবিদ ও যাপন সহায়ক অনন্যা ভৌমিকের মতে, “ফিট থাকার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে ৩০-এর আগেই। এটা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। দু’দিনের ডায়েট বা খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম মানার মাধ্যমে সাময়িক ফল পাওয়া গেলেও, দীর্ঘমেয়াদি ফিটনেসের জন্য ধারাবাহিকতা জরুরি।”
রেখা যেমন একা নন, বলিউডে তাঁর মতো উদাহরণ আরও রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হেমা মালিনী। রেখার চেয়ে বয়সে বড় হলেও, ৭৫ বছর বয়সেও তিনি নাচের অনুষ্ঠান করেন। কীভাবে এমনটা সম্ভব?
অনন্যা বলেন, “জাদু নয়, এর পিছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম। ফিট থাকার প্রবল ইচ্ছা এবং কঠোর পরিশ্রমেই এমন সম্ভব। ঘড়ি ধরে নিয়মিত খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত জল পান—এই সব কিছুর সঠিক মিশ্রণই হল সেই রহস্য। আর মানসিকভাবে চিন্তামুক্ত থাকা, চাপ কম রাখা এবং নিয়মিত অনুশীলন—এই তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নাচের ক্ষেত্রে অনুশীলন অপরিহার্য। অতএব, বার্ধক্যে ফিট থাকতে হলে প্রস্তুতি আগেই শুরু করা উচিত।